আধুনিক পদ্ধতিতে গরুর খামারের লাভ কেমন - গরুর খামার পরিকল্পনা

গরুর খামারের লাভ কেমন বা গরুর খামার পরিকল্পনা এই টপিক নিয়ে আজকে আমাদের আর্টিকেলের আলোচ্য বিষয়। এর সাথে কোন গরু পালনে লাভ বেশি এই সম্পর্কেও বিস্তারিত একটা ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব ইনশাল্লাহ। গরুর খামার অর্থাৎ গরুর খামারের লাভ কেমন (What is the profit of the cow farm?) কিংবা গরুর খামার পরিকল্পনা সম্পর্কে আমাদের সকলেরই একটা ধারণা থাকা প্রয়োজন। তো চলুন জেনে নেয়া যাক কিভাবে গরুর খামার পরিকল্পনা (Cow farm plan) করবেন বা গরুর খামারের লাভ কেমন হবে এই সম্পর্কে।
গরুর-খামার-পরিকল্পনা
বর্তমানে অনেকেই গরু পালনের ক্ষেত্রে মনোযোগী হয়ে উঠেছেন। গরুর খামার তৈরি সহ গরুর খামার সংক্রান্ত আরো যাবতীয় তথ্য জানতে হলে এ আর্টিকেলটি আপনাকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরোপুরি মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে। তো আমি আশা করব আপনি একজন প্রিয় পাঠক হিসেবে আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়বেন এবং গরুর খামার সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য উপলব্ধি করার চেষ্টা করবেন।

পোস্ট সূচিপত্রঃ গরুর খামারের লাভ কেমন - গরুর খামার পরিকল্পনা

ভূমিকা | গরুর খামারের লাভ কেমন - গরুর খামার পরিকল্পনা

আজকের এই আর্টিকেলের প্রধান আলোচ্য বিষয় হচ্ছে গরুর খামারের লাভ কেমন? এবং গরুর খামার পরিকল্পনা (gorur khamar porikolpona) এই সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে। এর পাশাপাশি আমি আপনাদের কোন গরু পালনে লাভ বেশি? গরুর খামার করে লাভবান হওয়ার উপায়, কোন জাতের গরু ভালো, ভালো জাতের গরু চেনার উপায়, দেশি গরু মোটাতাজাকরণ পদ্ধতি এবং গরু মোটাতাজাকরণর ঔষধ সহ গরুর খামারের আরো বিস্তারিত বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করার চেষ্টা করব। আপনি যদি গরুর খামার করতে আগ্রহী হন তার পূর্বে এই আর্টিকেলটি অবশ্যই মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

অনেক বিষয় সম্পর্কে জানতে পারবেন। এটি একটি ইউনিক বিজনেস আইডিয়া বলা চলে। বর্তমান সময়ে গরুর খামারের ব্যবসা খুবই লাভজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। অনেকেই গরুর খামারের উদ্যোগ নিচ্ছে। এবং সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছাচ্ছে। কাজেই, আর দেরি না করে আপনিও শুরু করতে পারেন। তবে অনুরোধ থাকবে আর্টিকেলটি পুরোপুরি মনোযোগ সহকারে পড়ুন আপনার অনেক অজানা বিষয় সম্পর্কে জানতে পারবেন ইনশাল্লাহ। তো চলুন কথা না বাড়িয়ে মূল লেখায় ফিরে যায়।

গরুর খামার পরিকল্পনা (Cow farm plan)

আজকের এই আর্টিকেলের প্রধান যে আলোচ্য বিষয় সেটি হচ্ছে গরুর খামার পরিকল্পনা (gorur khamar porikolpona)। বর্তমান সময়ে গরুর খামার একটি লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। অনেক মানুষ এখন গরুর খামার অর্থাৎ গরু পালনে মনোযোগী হয়েছে। গরুর খামার করতে হলে আপনার আগে থেকে একটি পরিকল্পনা থাকা দরকার। প্রথমে আপনি গরুর ছোট খামার দিয়ে শুরু করতে পারেন। প্রথমে আপনার খামারে দুই থেকে তিনটি উন্নত জাতের গাভী রাখতে পারেন। পাশাপাশি আরও দুই থেকে তিনটি এঁড়ে গরু রাখতে পারেন। প্রথমে দুই থেকে তিনটি যে গাভী রাখবেন সেই গাভী থেকে বাচ্চা হবে।
সেই বাচ্চা গুলো একটু বড় হলে আপনি আগের গাভী গুলোকে বাজারে বিক্রি করে দিতে পারেন। তারপর সেই বাচ্চা গুলোকে আবার লালন পালন করবেন এবং গরু বিক্রি করা সে টাকা দিয়ে আপনি বাজার থেকে আরও কিছু গরুর বাছুর কিনতে পারেন এতে করে আপনার গরুর খামারে গরুর সংখ্যা দাঁড়াবে দশ থেকে বারোটি । এভাবে আস্তে আস্তে আপনার খামারে গরুর সংখ্যা বাড়বে। এভাবে গরুর খামার পরিকল্পনা (gorur khamar porikolpona) করে এগিয়ে যেতে হবে। 

এভাবে আপনি আপনার ছোট গরুর খামার থেকে পর্যায়ক্রমে বড় গরুর খামারে পরিণত করতে পারবেন। শুধু একটু নিয়ম গুলো মেনে চলতে হবে। তাছাড়া বর্তমানে গরুর দুধেরও প্রচুর দাম রয়েছে। আপনি বাজারে গরুর দুধ বিক্রি করেও প্রতিদিন অনেক টাকা ইনকাম করতে পারবেন। যেগুলো আপনার গরুর খাবার সহ আপনার পরিবারের ভরণপোষণে অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। তাছাড়া গরুর খামার পরিকল্পনার জন্য প্রথমে আপনাকে খুব বেশি টাকা বিনিয়োগ করার প্রয়োজন নেই। 

প্রথমে অল্প কিছু টাকা দিয়ে শুরু করে ব্যবসার হালচাল বুঝে তারপর ধীরে ধীরে খামার বড় করতে পারেন। গরুর খামারে আপনাকে অধিকাংশ সময় শ্রম দিতে হবে। কেননা গরুর পরিচর্যার একটা ব্যাপার রয়েছে। ঠিকঠাক ভাবে গরু পরিচর্যা বা লালন পালন না করলে গরু অসুস্থ হয়ে যেতে পারে। এতে করে অনেক টাকা পয়সা খরচ হবে। কাজেই, আপনাকে সব কিছু পরিকল্পনা মাফিক করতে হবে এবং গরু লালন পালন বা পরিচর্যার ক্ষেত্রে সবসময় সচেষ্ট থাকতে হবে।

গরুর খামারের লাভ কেমন (What is the profit of the cow farm?) | গরুর খামার করে লাভবান হওয়ার উপায়

গরুর খামারের লাভ কেমন (gorur khamarer lav kemon) এটিও আজকের আর্টিকেলের প্রধান আলোচ্য আরেকটি বিষয়। বর্তমানে গরুর খামার লাভজনক ব্যবসা গুলোর মধ্যে একটি। অনেকে গরুর খামার করে লাভবান হওয়ার উপায় সম্পর্কে জানতে চাই। তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, যদি আপনি সঠিক পরিশ্রম এবং পরিকল্পনা মাফিক গরুর খামার পরিচালনা করতে পারেন তাহলে আপনি গরুর খামার থেকে প্রচুর টাকা পয়সা ইনকাম করতে পারবেন। 

উপরে গরুর খামার পরিকল্পনার একটা ধারণা দেওয়া হয়েছে। এখন আমাদের জানতে হবে গরুর খামারের লাভ কেমন বা গরুর খামার করে লাভবান হওয়ার উপায়। আগেই বলে রাখি সফলতার কোন শর্টকাট হয় না। আপনাকে পরিশ্রম এবং ধৈর্য সাথে সাথে সঠিক পরিকল্পনা মাফিক এগিয়ে কাজ করতে হবে। বর্তমান বাজারে গরুর চাহিদা অত্যন্ত বেশি এবং গরুর মাংসের দাম আকাশ ছোঁয়া। যেটা সাধারণ মানুষের কাছে ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেছে। 

আর এই গরুর মাংসের চাহিদা কখনোই কমবে না, বরং দিন দিন বাড়তেই থাকবে। কাজেই, গরুর খামার করা একটি লাভবান ব্যবসা হতে পারে। ধরুন আপনার খামারে কয়েকটি গরু আছে আপনি সেগুলোকে সঠিকভাবে পরিচর্যা বা লালন-পালন করে বড় করলেন। তারপর আপনার যখন টাকার প্রয়োজন হবে তখন আপনি একটি গরুকে বিক্রি করে দিতে পারেন। এতে করে প্রয়োজন মত আপনার টাকার চাহিদা পূরণ হলো পাশাপাশি গরু থেকে আপনার লাভও হল। 

আর কোরবানি ঈদের সময় গরুর চাহিদার কথা তো আপনাদের আর বলতে হবেনা। আপনারা নিজেরাই জানেন সে সময় গরুর কি পরিমান চাহিদা থাকে আর কেমন দাম থাকে। আপনি যদি আপনার খামারের গরুকে কোরবানি ঈদের টার্গেট করে তৈরি করেন তাহলে ব্যবসার লাভ আরো দ্বিগুণ বেড়ে যাবে। তাছাড়া আপনি একটি বাছুর গরুকে তিন থেকে ছয় মাস লালন পালন করার পরেও বিক্রি করতে পারেন। এতে করেও অনেক লভ্যাংশ গুনতে পারবেন আপনি। 

তাছাড়া গরুর দুধের চাহিদাও বর্তমান বাজারে অত্যাধিক। বর্তমান সময়ে অভিজাত মিষ্টান্ন থেকে শুরু করে বাসা বাড়িতে হোটেল রেস্টুরেন্টে সব জায়গায় গরুর দুধের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আপনি হোটেল মালিকের সঙ্গে কথা বলে সেখানেও গরুর দুধ সাপ্লাই দিয়ে একটা ভাল এমাউন্ট ইনকাম করতে পারেন। তাছাড়া গরুর দুধ থেকে মূল্যবান সব খাবার যেমনঃ মাখন, ঘি, পনির ইত্যাদি তৈরি করা হয়ে থাকে।
তাছাড়া গরুর যে গোবর হয় সেটা দিয়েও বায়োগ্যাস তৈরি করা হয়ে থাকে। পাশাপাশি গরুর গোবর বিক্রি করেও আপনি টাকা ইনকাম করতে পারবেন। যারা জৈব সার কিংবা কম্পোস্ট সার তৈরি করে তারা মূলত এই গোবরগুলো কিনে থাকে। মোট কথা গরুর কোন কিছুই আপনাকে ফেলে দিতে হবে না। সবকিছু বিক্রি করেই আপনি মোটামুটি টাকা ইনকাম করতে পারবেন। এটা হচ্ছে আধুনিক ব্যবসা তথা আধুনিক গরুর খামার পরিচালনার মূলনীতি। 

গরুর দুধ এবং গোবর থেকে শুরু করে যাবতীয় কিছু বিক্রি করে আপনার গরুর খাবারের টাকা উঠে আসবে। আর গরু বিক্রি করলে তো টাকা আছেই। এগুলো তখনই সম্ভব হবে যখন আপনি সঠিক পরিকল্পনা এবং শ্রম দেবেন। মোটকথা, আপনার পরিকল্পনা এবং শ্রম যদি যদি ঠিকঠাক থাকে তাহলে গরুর খামার করে আপনি মোটা অংকের একটা টাকা লোভ্যাংশ হিসেবে গুনতে পারবেন। 

এখন নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন গরুর খামারের লাভ কেমন ? তো আশা করছি আমি আপনাদের গরুর খামারের কেমন লাভ (gorur khamarer lav kemon) বা গরুর খামার করে লাভবান হওয়ার উপায় সম্পর্কে সুস্পষ্ট একটা ধারণা দিতে সক্ষম হয়েছি।

কোন গরু পালনে লাভ বেশি | কোন জাতের গরু ভালো

আমরা স্বভাবতই একটা প্রশ্ন করে থাকি যে কোন গরু পালনে বেশি লাভ বা কোন জাতের গরু ভালো। অবশ্যই এ বিষয়টি আমাদের জেনে রাখা প্রয়োজন। কারণ খামারে যেন তেন গরু লালন পালন মোটেও লাভজনক হবে না। তাই কোন গরু পালনে বেশি লাভ বা কোন জাতের গরু ভালো এই বিষয়টা সম্পর্কে আমাদের অবশ্যই ধারণা রাখতে হবে এবং সেই গরু গুলো খামারে লালন পালন করতে হবে। বিভিন্ন জাতের গরু রয়েছে। সব ধরনের গরু পালন কিন্তু লাভজনক নয়। 

আপনাকে মোটা অংকের টাকা লোভ্যাংশ হিসেবে গুনতে হলে অবশ্যই সিলেক্টেড কিছু গরুর জাত রয়েছে যে গরুগুলো পালনে বেশি লাভ হয়। সেগুলোই হচ্ছে গরুর ভাল জাত। উন্নত জাতের গরুর তালিকায় প্রথমে যে গরুর নাম থাকবে সেটি হচ্ছে হলস্টেইন ফ্রিজিয়ান। এই গরুটি লালন-পালন অত্যাধিক লাভজনক। হলস্টেইন ফ্রিজিয়ান জাতের গরুটি প্রধানত হল্যান্ডের ফ্রিজল্যান্ড প্রদেশে হয়ে থাকে। এই জাতের গরুটি দুধের জন্য বেশ ভালো। 

দেখা যায় দৈনিক ৩৫ থেকে ৪০ লিটার দুধ দিয়ে থাকে এবং এই গরুর ওজন ৮০০ থেকে ৯০০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। যেটা অন্যান্য জাতের গরুর তুলনায় অত্যন্ত বেশি। কাজেই, আপনার খামারে আপনি হলস্টেইন ফ্রিজিয়ান জাতের গরু লালন পালন করতে পারেন। এটা গরুর একটি ভাল জাত পাশাপাশি এই গরু পালনে বেশি লাভ। এবার আরেকটি গরুর জাতের সাথে আপনাদের পরিচয় করে দিই। গরুটি হলো জার্সি জাতের। এই গরুটি প্রধানত দেখা যায় জার্সি নামের ব্রিটিশ দ্বীপে। এই গরুটি পালানো অত্যন্ত লাভজনক।

গরুর ওজন বয়স ভেদে বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। তবে বিক্রির উপযুক্ত বয়স ৪০০ থেকে ৫০০ কেজি। এরকম ওজনে গরুটি আপনি বিক্রয় করতে পারেন। মোটামুটি একটা লোভ্যাংশ আসবে ইনশাল্লাহ। গরুর আরেকটি ভালো জাত হলো শাহীওয়াল এটি পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে দেখতে পাওয়া যায়। এই গরুর জাত দুধ এবং মাংসের জন্য বিখ্যাত। সঠিক পরিচর্যা করলে প্রাপ্তবয়স্ক বয়সে গরুর ওজন ৭০০ থেকে ১০০০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। 

তাছাড়া আরো উন্নত জাতের গরুও রয়েছে যেগুলো আপনারা আপনাদের খামারে রাখতে পারেন। তো এখন নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন কোন গরু পালনে বেশি লাভ। আপনার বোঝার সুবিধার জন্য নিচে কিছু ভালো জাতের গরুর তালিকা তুলে ধরলাম। কোন জাতের গরু ভালো তার তালিকা নিম্নরূপঃ
  • হলস্টেইন ফ্রিজিয়ান জাত
  • জার্সি জাতের গরু
  • শাহীওয়াল জাত
  • ব্রাহমা জাতের গরু
  • মিরকাদিম জাত
  • রেড চিটাগাং ক্যাটেল
  • সিদ্ধি জাতের গরু
  • থারপারকার জাতের গরু
এখানে যেই জাতের গরু গুলোর নাম উল্লেখ করা হলো এগুলো খামারে পালন করা খুবই লাভজনক। তো আমি আশা করছি কোন গরু পালনে বেশি লাভ বা কোন জাতের গরু ভালো এ বিষয় সম্পর্কে আপনাদের একটা সুস্পষ্ট ধারণা দিতে পেরেছি।

ভাল জাতের গরু চেনার উপায় (Ways to identify good breed cows)

এখন আমরা জানবো ভালো জাতের গরু চেনার উপায় সম্পর্কে। বুঝেছি আপনি সবকিছু ভালোমতো করলেন কিন্তু আপনি ভাল জাতের গরু চেনেন না তাহলে কিন্তু কিছুই হবে না। কাজেই, আপনাকে ভালো জাতের গরু সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে এবং ভালো জাতের গরু চিনতে হবে। ভাল জাতের গরু চিনার বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য বা লক্ষণ রয়েছে। যে বৈশিষ্ট্য গুলো একটি গরুর মধ্যে থাকলে বুঝতে পারবেন এই গরুটি আসলেই ভাল জাতের একটি গরু। 

ভালো জাতের গরু চেনার প্রথম যে উপায় সেটি হচ্ছে গরুর দৈহিক আকৃতি বা দৈহিক গঠন। ভালো জাতের গরুর দৈহিক গঠন গোলগাল আকৃতির হয়ে থাকে যাকে আমরা গোজ আকৃতির দেহ বলে থাকি। অর্থাৎ গাভীটিকে পিছন দিক থেকে দেখলে গোজ আকৃতির মত দেখাবে। এটা ভালো গরু চেনার প্রথম বৈশিষ্ট্য। গরুর পিছনে দুই পায়ের মধ্যে যথেষ্ট ফাঁক থাকবে এবং পেছনের দুই রানে প্রচুর পরিমাণ মাংস থাকবে এটাও একটি ভালো গরু চেনার পদ্ধতি। 

তাছাড়া গরুর দুধ যাকে আমরা ওলান বা বাট বলে থাকি সেটা অবশ্যই বড় হতে হবে। ভালো গরুর ওলান বা বাট সবসময় বড় হয়ে থাকে। যে গরুর ওলান বা বাট বড় থাকে সেটা প্রাথমিকভাবে ধরেই নেয়া যায় যে ভালো জাতের গরু এবং ওলান বা বাট বড় এর বৈশিষ্ট্যটিও ভাল জাতের গরু চেনার একটি উপায়। ভালো জাতের গরু চেনার আরেকটি পদ্ধতি হচ্ছে গরুর বয়স। যেটা অবশ্যই জানা থাকা প্রয়োজন। একটি গরু সাধারণত ১০ বছর বয়স পর্যন্ত বাচ্চা এবং দুধ দিয়ে থাকে। কাজেই, গাভীর বয়স জানাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভালো জাতের গরু চেনার ক্ষেত্রে।

আবার যে গাভী বেশি দুধ দেয় সে গরুটিও অবশ্যই ভালো। বেশি দুধ দেওয়া ভালো জাতের গরু চেনার একটি উপায় হতে পারে। এই বৈশিষ্ট্যগুলো যে গরুর মধ্যে পাওয়া যাবে নিঃসন্দেহে সেটি ভাল জাতের একটি গরু। একটি ভালো জাতের গরুর মধ্যে অবশ্যই এই প্রাথমিক লক্ষণগুলো থাকতে হবে। তাছাড়া আরও বৈশিষ্ট্য থাকতে পারে তবে এই বৈশিষ্ট্যগুলো অবশ্যই থাকতে হবে। তাছাড়া বিভিন্ন ক্রস গরুও রয়েছে। ক্রস গরু কেনা থেকে আপনি অবশ্যই বিরত থাকবেন। আপনি গরু ক্রয়ের সময় এই বৈশিষ্ট্যগুলো যাচাই বাছাই করে নিবেন। তো আশা করছি আপনাদের মোটামুটি একটা ধারণা দিতে পেরেছি ভাল জাতের গরু চেনার উপায় সম্পর্কে।

দেশি গরু মোটাতাজাকরণ পদ্ধতি | গরু মোটাতাজাকরণ ঔষধ

এখন আমরা জানবো দেশি গরু মোটাতাজাকরণ পদ্ধতি এবং গরু মোটাতাজাকরণ ঔষধ সম্পর্কে। অনেকেই এখন গরু লালন-পালনের ক্ষেত্রে ব্যাপক গুরুত্ব দিচ্ছে। গুরুত্ব দেওয়ার একটাই কারণ হচ্ছে এই ব্যবসায় প্রচুর লোভ্যাংশ অর্জন করা সম্ভব। সঠিক পরিশ্রম করে গরুর লালন পালন করলে এবং সেটা বিক্রি করে আপনি প্রচুর টাকা পয়সায় আয় করতে পারবেন। যেটা আপনাকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তুলবে। 

দেশি গরু মোটাতাজাকরণ পদ্ধতি হলো বিশেষ একটি পদ্ধতি যেখানে গবাদি পশুকে রক্ষণাবেক্ষণ এবং সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে মোটাতাজাকরণ করে তোলা হয়। এতে করে গরুর মাংস তাড়াতাড়ি বৃদ্ধি পায় এবং এটি খুব তাড়াতাড়ি বিক্রির উপযুক্ত হয়ে ওঠে। গরু মোটাতাজাকরণের ক্ষেত্রে একটি বিষয় লক্ষ্য করতে হবে।
আপনার গরুকে প্রচুর পরিমাণে খেতে দিতে হবে। আগের খাবার তালিকা এবং মোটাতাজাকরণের উদ্দেশ্যে যে গরুকে লালন পালন করবেন তার খাবার তালিকা অবশ্যই ভিন্ন হতে হবে। গরু মোটাতাজাকরণের ক্ষেত্রে যে খাবারগুলো কে প্রতিনিয়ত খেতে দিতে হবে সেগুলো হচ্ছে বার্লি, গমের ভুষি, খইল, ভুট্টা এবং আটা সঙ্গে লালি। 

গরুর লালি আলাদাভাবে হাটে কিনতে পাওয়া যায়। এই খাবারগুলো একসাথে নিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে প্রতিনিয়ত গরুকে খেতে দিতে হবে। এগুলোর সাথে আপনি গরুকে কিছু ফিড খেতে দিতে পারেন। তিন মাস এভাবে খাওয়াতে থাকুন দেখবেন আপনার গরু মোটা তাজা হয়ে গেছে। এর সাথে সাথে গরুকে রেগুলার পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাবার খেতে দিতে হবে। এই ছিল গরু মোটাতাজাকরণ প্রক্রিয়া। এই খাদ্যাভ্যাসগুলো গড়ে তুলুন দেখবেন আপনার দেশি গরু মোটা তাজা হয়ে গেছে।

এবারে আসা যাক গরু মোটাতাজাকরণ ঔষধ সম্পর্কে। গরু মোটাতাজা করতে হলে আপনাকে গরুর হজম শক্তির দিকে নজর দিতে হবে। হজম শক্তি বেশি হলে গরু এমনিতেই বেশি খাবে যার ফলে গরু খুব তাড়াতাড়ি মোটাতাজা হয়ে যাবে। আর এই হজম শক্তি বৃদ্ধিকারক ওষুধ গরুকে খাওয়াতে হবে। এর মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ হলঃ
  • জাইমোভেট
  • ডিজিমিক্স
  • বায়োলাক
  • বায়োগাট
  • এসিলাক প্লাস
  • ক্যাটাফস
এই ওষুধগুলো আপনি গরুকে প্রাথমিকভাবে খাওয়াতে পারেন । এগুলো গরুর হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে। গরুর রুচি ফিরে আসবে এবং গরু মোটা তাজা হবে। এগুলোই হলো মূলত গরু মোটাতাজাকরণের ঔষধ। তাছাড়া আরও বিভিন্ন রকম ওষুধ রয়েছে গরু মোটাতাজাকরণের জন্য। প্রাথমিকভাবে আপনি এগুলো খাওয়াতে পারেন। তাছাড়া আপনি আরো ভালো ফলাফলের জন্য পশু ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। তো আশা করছি এতক্ষণে গরু মোটাতাজাকরণ পদ্ধতি এবং গরু মোটাতাজাকরণের ঔষধ সম্পর্কে বিস্তারিত বুঝতে পেরেছেন।

শেষ কথা বা লেখকের মন্তব্য | গরুর খামারের লাভ কেমন - গরুর খামার পরিকল্পনা

আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমি আপনাদের গরুর খামারের লাভ কেমন (gorur khamarer lav kemon) এবং গরুর খামার পরিকল্পনা পাশাপাশি কোন গরু পালনে লাভ বেশি এই বিষয়ে সহ গরুর খামারের আরো যাবতীয় বিষয় এবং কিভাবে একটি গরুর খামার গড়ে তুলবেন ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। এই আর্টিকেলে অত্যন্ত সহজ এবং সাবলীল ভাষায় আমি বিষয়গুলো বোঝানোর চেষ্টা করেছি। আশা করছি আপনি আর্টিকেলটি পড়ে পুরোপুরি বিষয়টি ভালোমতো বুঝতে পেরেছেন।

এরপরও যদি এই আর্টিকেল এর কোন বিষয়ে আপনার বুঝতে অসুবিধা থাকে তবে আপনি ব্যক্তিগতভাবে আমাকে কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। আমি যথাসাধ্য সাহায্য করার চেষ্টা করব ইনশাল্লাহ। আর এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনার যদি বিন্দুমাত্রও উপকার হয়ে থাকে তবে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করতে ভুলবেন না। তাদেরকেও গরুর খামারের এই লাভজনক ব্যবসাটি সম্পর্কে জেনে উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগ করে দিন আপনার একটি শেয়ারের মাধ্যমে। 

আর বিভিন্ন বিষয়ের আপডেট খবর সবার আগে পেতে এই ওয়েবসাইটটির (M.F. Hossain) সাথেই থাকুন এবং ব্যক্তিগতভাবে আমাকে সাপোর্ট দিন। আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করি আপনাদের সামনে সঠিক তথ্য তুলে ধরতে। আজকে আর কথা না বাড়িয়ে আমার এই সংক্ষিপ্ত আলোচনার এখানেই ইতি টানছি। এতক্ষণ সাথে থাকার জন্য সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

M.F. Hossain ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url